রমযান মাস ও আল্লাহভীরুতা
এ বিষয়ে একটি অনন্য ঘটনা। ভারতবর্ষের উপর ইংরেজরা তখন ক্ষমতায় পরিপূর্ণভাবে সমাসিন। সময় গীষ্মকাল। এর মধ্যেই শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনা। অর্থাৎ এটা রমযান মাস। গ্রীষ্মের সূর্য প্রচন্ডভাবে তাপ বিকরণ করে চলছে, সূর্যতাপে জনজীবন অতিষ্ঠ। দিল্লীর এক সেনানিবাসের সামননে বিরাট প্রশস্থ মাঠ। এখানে সৈন্যদের কুচকাওয়াজ এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ হয়। সকাল থেকে কাঁধে ইটের বোঝা নিয়ে মাঠের এক প্র্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ছুটে চলেছে একজন সিপাহী। বিরাহীন দৌড়াদৌড়ি। সেনানিবাসের প্রধানের কার্যালয় থেকে মাঠের অনেকখানি অংশ দৃষ্টিগোচর হয়। সেনানিবাসের প্রধান সেনা অফিসার একজন ইংরেজ। কাজের ফাঁকে ফাঁকে এ অফিসার মাঠের দিকে দৃষ্টিপাত রেখেছেন এবং দেখতে পাচ্ছেন একজন সিপাহীর শাস্তির দৃশ্য। এ রকম দৃশ্য প্রায় সময় তাকে দেখতে হয়। কারণ সিপাহীরা কোন অপরাধ করলে তাদেরকে এ জাতীয় শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে। এটাকেও তাই কোন অপরাধের শাস্তি বলে মনে করলেন। দুপুর গড়িয়ে সূর্য কিছুটা পশ্চিম দিকে হেলে পড়েছে। অফিসার লক্ষ্য করলেন সিপাহীটি এক সময় কাঁধ থেকে ইটের বোঝা নামিয়ে রাখলেন এবং দ্রুত কলতলায় গেলেন। অফিসার ভাবলেন এই প্রচন্ড রৌদ্রে তার নিশ্চয় ভীষণ পিপাসা লেগেছে, তাই হয়েতো তাকে পানি পান করার সুযোগ দেয়া হয়েছে। কি কারণে যেন সিপাহীটির কার্যকলাপ এ অফিসার মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করতে লাগলেন। তিনি দেখলেন, সিপাহী কলের পানিতে হাত, মুখ, পা ধৌত করলেন। কিন্তু আশ্চর্য তিনি এক ঢোক পানিও পান
করলেন না। তিনি অবাক হয়ে গেলেন। ভাবলেন, সকাল থেকে যে লোকটি ইটের বোঝা কাঁধে নিয়ে দৌড়াচ্ছে। পিপাসায় প্রান ওষ্ঠাগত হওয়ার কথা। কিন্তু কেন তিনি পান করলেন না এটা তার নিকট বিস্ময় হয়ে উঠল। কিছুক্ষণপর তিনি দেখলেন সিপাহীটি ইটের বোঝা কাঁধে নিয়ে পূর্বের মতই দৌড়াতে শুরু করছে। ভীষণ কৌতুহল বশত এ অফিসার ঐ সিপাহীটিকে তার অফিস কক্ষে ডেকে আনলেন এবং তার নাম জিঞ্জেস করলেন। নাম শুনে বুঝলেন সিপাহী একজন মুসলমান। কি কারণে তাকে এ শাস্তি দেওয়া হচ্ছে তা শুনে বুঝলেন এটা একটা লঘু অপরাধে গুরুদন্ড। আরও জানলেন যিনি শাস্তি দিয়েছেন তিনি একজন হিন্দু সেনা অফিসার। এবার এই ইংরেজ সেনা অফিসার ভাবলেন যে, ধর্ম বিদ্বেষই এ লঘু অপরাধে গুরু শাস্তির কারণ। অফিসার সিপাহীকে জিঞ্জেস করলেন তোমার এই শাস্তির মেয়াদ কতক্ষণ? সিপাহী উত্তরে বললেন, সূর্য উদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত। অফিসার এবার সিপাহীকে সুধালেন এত কঠিন অবস্থায়ও তুমি পানি পান করলে না কেন? সিপাহী বিনয়ের সাথে জানালেন, বললেন, স্যার এটা আমাদের রমযান মাস, আর আমি বর্তমানে রোজাদার। রোজা অবস্থায় কোন প্রকার, পানাহার ধর্মীয় অনুশাসনে নিষেধ। সূর্যাস্তের পর আল্লাহ চাইলে ইফতার করব। সিপাহীর ধর্মের প্রতি এমন অবিচল আস্থা এবং স্রষ্টার জন্য ভয় এই ইংরেজ অফিসারকে অভিভূত করে ফেলল। তিনি অনুধাবন করলেন ইসলাম যে একটি সত্য ধর্ম এবং স্রষ্টার পরোক্ষ সহযোগিতা না থাকলে এমন কঠিন ব্রত নিয়ে কেহ রোজা রাখতে পারেন না। আল্লাহ পাকের অশেষ অনুগ্রহ এই ইংরেজ সেনা অফিসার সত্য ধর্ম ইসলামে দীখ্ষিত হয়েছিলেন। আল্লাহ পাক তাকে কবুল করে নিন। আমিন। রমযান যে আল্লাহ ভীরুতার মাস এবং রোজা যে মুসলমানদেরকে আল্লাহ ভীরু করেন এটা তারই একটা অনুপম ঘটনা মাত্র। মহানবী (সা.) এ মহিমান্বিত মাসে চারটি আমল অধিক পরিমাণে করার নির্দেশ দিয়েছেন। এর মধ্যে দুটি আল্লাহ পাককে সন্তুষ্ট করার জন্য
১. অধিক পরিমাণে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ পাঠ করা
২. আল্লাহর নিকট বেশি বেশি ক্ষমা চাওয়া।
আর দুটি আমল হল
৩. আল্লাহ পাকের নিক জান্নাত কামনা করা
৪. জাহান্নাম থেকে মুক্তি চাওয়া আল্লাহ পাক যেন আমাদের এ মাসের রহমত লাভে ধন্য করেন। আমিন
No comments:
Post a Comment