রমযান মাস ও আল্লাহভীরুতা
রোজার আরবি শব্দ হল সাওম। এর আভিধানিক অর্থ বিরত থাকা। আর শরীয়তের পরিভাষায় রোজার নিয়তে সুবহে সাদিক থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত পানাহার ও যৌন মিলন থেকে বিরত থাকাকে রোজা বলা হয়।পবিত্র রমযান মাস বৎসরের সর্বশ্রেষ্ঠ মাস। সবচেয় বেশি ফযিলতের মাস, সওয়াব অর্জনের মাস। রমযান রহমত, বরকত ও মাগফিরারে মাস। রমযান মাস জাহান্নাম থেকে মুক্তির মাস। আল্লাহ তায়ালা নিজ করুণায় এই মাসে তাঁর রহমতকে অবারিত করে দেন, দয়া সুলভ বিষয়গুলো সহজ করে দেন। আর তিনি ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করে দেন তাঁর ক্ষমার হাত সম্প্রসারিত করে দেন তাঁর ফরমাদার ও অনুগত বান্দাবান্দীদের জন্য এ মাসে আল্লাহ পাকের রহমত বৃষ্টির মত বর্ষিত হতে থাকে যা আমরা সাধারণ দৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ করতে পারি না।
সমগ্র মানব জাতির কল্যাণের জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ ঐশি ধর্মগ্রন্থ পবিত্র আল কোরআন এ মাসে নাজিল হয়।
আর এ মাসেই নিহিত রয়েছে মহা মহিমাময় রাত্রি পবিত্র শব-ই ক্বদর। এই রজনীর এবাদত হাজার মাসের এবাদতের চেয়েও উত্তম।
মহান আল্লাহ পাক এ মাসে তাঁর ঈমাণদার বান্দাবান্দীর যে কোন উত্তম কাজের বিনিময় বা প্রতিদান কমপক্ষে ৭০ গুণ বাড়িয়ে দেন। রাসূল পাক (সা.) ইরশাদ করেন পবিত্র মাহে রমযানের একটি নফল এবাদত অন্য সময়ের একট ফরয এবাদতের সমান, আর এ মাসের একটি ফরয ইবাদত অন্য মাসের সত্তরটি ফরয এবাদতের সমান। (রায়হাকী ও ইবনে হিব্বান)
রমজানের রোজার ফযিলত বর্ণনা করে মহানবী (সা.) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি ঈমাণে চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে পরকালীন প্রতিদান কামনায় রমযানের রোজা রাখবে, মহান আল্লাহ পাক তার অতীত জীবনের সকল পাপ মার্জনা করে দিবেন। মহানবী (সা.) আরও বলেন (হাদীসে কুদসীতে ) আল্লাহ বলেন, রোজা আমার জন্য, আর আমি নিজেই এর প্রতিদান, ঈমাণদার বান্দাবান্দীর জন্য এর চেয়ে বড় পুরস্কার আর কি হতে পারে। রোজাদারের মুখের দুর্গন্ধ আল্লাহ পাকের নিকট মেশক আম্বরের চেয়েও উত্তম।
রমযানের রাতের এবাদতে ফজিলত সম্পর্কে বর্নিত হয়েছে, মহানবী (সা.) বলেন যে, ব্যক্তি ঈমানের সাথে ছওয়াবের নিয়তে রমযানের রাতগুলোতে কিয়াম করবে (তারাবীহ) পড়বে তার অতীত গুনাহ সমূহ মাফ করে দেওয়া হবে।
মহানবী (সা.) আরও ইরশাদ করেন, এ মাসে যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে ইফতার করাবে সে রোজাদারের সম পরিমান নেকি লাভ করবে এবং এটা তার গুনাহ মাফ হওয়ার এবং জাহান্নামের আগুন হতে মুক্তি লাভের উপায় হবে। আর ঐ রোজাদারের ছওয়াবে মোটেও কম করা হবে না। আরজ করা হল ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাদের প্রত্যেকতো এ সার্মথ্য রাখে না যা দ্বারা তিনি রোজাদারকে ইফতার করাবেন? তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন এ সওয়াব পেট ভরে খাওয়ানোর উপর নির্ভর করে না বরং এ ছওয়াব মহান আল্লাহ পাক সেই ব্যক্তি দান করবেন যে ( নিজের সাধ্যানুযায়ী) এক চুমুক দুধ, কিংবা একটি মাত্র খেঁজুর, কিংবা এক ঢোক পানি দ্বারা ইফতার করাবেন। আর যে ব্যক্তি কোন রোজাদারকে পরিতৃপ্তি সহকারে আহার করাবে মহান আল্লাহ পাক তাকে আমার হাউজে কাওছার থেকে এভাবে পান করাবেন যে, সে জান্নাতে প্রবেশের পূর্বে আর পিপাসিত হবে না।
সুস্থ বিবেক সম্পন্ন সাবালেগ মুসলিম নর নারীর জন্য এ মাসে সিয়াম সাধনা ফরয করা হয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, হে ঈমাণদারগণ তোমাদের উপর সিয়াম (রোজা) ফরয করা হয়েছে, যেমন ফরয করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যেন তোমরা মুত্তাকী-আল্লাহ ভীরু হতে পার।
উল্লেখিত আয়াতে কারীমাহ দ্বারা সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, পবিত্র মাহে রমযানের সিয়াম সাধনা মূলত আল্লাহ ভীরু হওয়ার জন্যই। রোজা দ্বারা মুসলমানদের সংযম সাধনা, আত্মশুদ্ধি, সাম্য, সহানুভূতি, সহমর্মিতা ও মানবীয় সৎ গুণাবলি সহ আল্লাহ ভীরুতা সৃষ্টি করাই মহান স্রষ্টার আসল উদ্দেশ্য। পবিত্র রমযানে রোযাদারের পালনীয় কাজগুলি প্রত্যক্ষ করা যায়। যেমন দান খয়রাত, খাওয়ানো ইত্যাদি। সহমর্মিতা অনুধাবনের জন্য রোজার অনন্য ভূমিকা রয়েছে। অভাবগ্রস্থ অনাহারী মানুষের ক্ষুধার জ্বালা ধনবানগণ রোযা রাখার মাধ্যমে অনুধাবন করতে পারেন। কিন্তু দেখা যায় কিছু কিছু ধনবান ব্যক্তি কিন্তু এরা ভীষণ চালাক। তারা রোযাই রাখে না, অনুধাবন করবেন কীভাবে?
লৌকিকতাবিহীন সিয়াম সাধনার একটা দিক হল আল্লাহভীরুতা। অন্যান্য এবাদতে লোক দেখানো কিছু উদ্দেশ্য থাকলেও রোযার মাধ্যমে যে আল্লাহভীরুতা সৃষ্টি হয়, তাতে লোক দেখানোর কোন অবকাশ নেই। রোযদান ব্যক্তি গোপনে পানাহার করেও রোযা রাখার ভান করতে পারেন। কিন্তু রোযাদার কখনও তা করেন না। প্রকৃত আ্লাহভীরুতা তার মধ্যে কাজ করে।
No comments:
Post a Comment